কোটা আন্দোলন কতটা যৌক্তিক

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে সারা দুনিয়ায় কোটা সংরক্ষণ করা হয়। সমতার ভিত্তিতে কোনও দেশকে উন্নত করতে কোটা জরুরি। বাংলাদেশেও এই ব্যবস্থা থাকা স্বাভাবিক। তাহলে কোটা নিয়ে এতো বিতর্ক কেন, কেন আন্দোলন? সংশ্লিষ্টদের মতে, কোটা নিয়ে বিতর্ক থাকার কোনও কারণ নেই। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে কারা কতটুকু পিছিয়ে রয়েছে, কত শতাংশ কোটা রাখা প্রয়োজন, এই হিসাবে দেশে কখনোই কোটা চালু ছিল না। সে কারণেই সৃষ্টি হয় জটিলতা। ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার প্রচলন ছিল। তবে ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাপক কোটাবিরোধী আন্দোলন হয়। শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে সরকার ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। যথাযথ সংস্কার না হওয়াতেই যত বিপত্তি দেখা দেয়। সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগে দুটি গ্রেডে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর পরই তা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নেমেছেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) আন্দোলনকারীরা ঢাকার শাহবাগ মোড় চার ঘণ্টার মতো অবরোধ করে রাখেন। একই দাবিতে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবরোধ করেছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি নতুন নয়। স্বাধীনতার পর নির্বাহী আদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি চালু করা হয়। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হতো। বাকি পদ কোটায় নিয়োগ হতো। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়। পরে মেধায় নিয়োগের হার আরও কিছু বাড়ানো হয়।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা (পরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি) কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। এ ছাড়া ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়। ওই বছর কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছিলেন। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে। ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন। ৫ জুন এই রিটের রায়ে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে ১ জুলাই থেকে টানা আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে আরও রয়েছে পরবর্তী সময়ে সরকার কোটাব্যবস্থা নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রেখে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া; সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক শিক্ষাব্যবস্থা হতে পারে না। তারা আরও বলেন, আন্দোলনকারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানান। তারা দেশের সূর্যসন্তান। তাই বলে তাদের সন্তান এমনকি নাতি-নাতনিরা পরিশ্রম না করেই কোটায় চাকরিতে যোগ দেবে, এটা তারা মানেন না। মেধাবীরা পরিশ্রম করে চাকরি পাবেন, কোটায় নয়।
আবার একদল শিক্ষার্থী বলছে, কোটা বাতিলের দাবিতে কখনও আন্দোলন হয়নি। এর আগে আন্দোলন হয়েছে কোটা সংস্কার করার দাবিতে। সরকার দাবির মুখে কোটা বাতিল করে দিয়েছে। তবে আদালতের রায়ের ফলে কোটা ব্যবস্থা ফিরে আসায় তা নিয়ে আইনি লড়াই করার পক্ষে মত দেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বলেন, এটা যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালতের বিষয় আইনগতভাবেই সমাধান করা উচিত। আদালত কোনো সিদ্ধান্ত নিলে দেশের নাগরিক হিসেবে সে ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত নয়। আমার মনে হয়, এর বিপক্ষে যদি কারও বক্তব্য থাকে সেটা আইনগতভাবেই দেখতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির অবৈধ ও অযৌক্তিক আন্দোলনের কারণে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সংবিধান পরিপন্থি একটি পরিপত্র জারি করেছিল। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাবির ভিসির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে কোটা বাতিলের অবৈধ আন্দোলন করেছিল।
২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সামনের সারিতে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি গণমাধ্যমে বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোটা বাতিলের নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্তকে আদালত কীভাবে বাতিল করতে পারে। আমি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আদালতকে ব্যবহার করে সরকারই রাজনৈতিক ফায়দা লাভের জন্য কোটা বাতিলের বিষয়টি সামনে এনেছে। মূলত চলমান যেসব ইস্যু রয়েছে, সাধারণ জনগণের দৃষ্টি সেদিক থেকে সরিয়ে দিতেই সরকার এটি করেছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলন একটি যৌক্তিক আন্দোলন। কোটা পদ্ধতি না থাকা দেশের জন্য প্রয়োজন। আমাদের দেশে চাকরিতে প্রতিযোগিতা নেই বলে ছাত্ররা দেশ ছেড়ে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতার সুযোগ থাকলে এটি হবে না। দেশের জন্য কোটা পদ্ধতি বাতিল করা দরকার।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জীবনবাজি রেখে এই বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। সেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের সন্তানদের জন্য কোটার যে বিষয়টি ছিল, সেটা যথাযথ প্রতিপালনের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় অমনোযোগিতা ও অমান্য করা হচ্ছে। সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকে একটি নির্দেশনা এসেছিল। আমরা সবাইকে অনুরোধ জানাব উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতি ও নির্দেশনার প্রতি সবাই যথাযথভাবে সম্মান দেখাবেন। তিনি আরও বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, মুক্তিযুদ্ধের এত সময় পরে এসেও তাদের সন্তানদের জন্য রাখা কোটা প্রশ্নে কিছু মানুষের এত উষ্মা। দেশ যারা স্বাধীন করে দিয়েছেন তাদের সন্তানদের দিয়ে তারা যদি দ্বিতীয়বার প্রশ্নবিদ্ধ হয় তাহলে এটা কোনোভাবে কাম্য নয়।
সময়ের আলো/জেডআই
The property, complete with 30-seat screening from room, a 100-seat amphitheater and a swimming pond with sandy shower…
The property, complete with 30-seat screening from room, a 100-seat amphitheater and a swimming pond with sandy shower…
The property, complete with 30-seat screening from room, a 100-seat amphitheater and a swimming pond with sandy shower…
Post Comments
Subash Chandra
We’ve invested every aspect of how we serve our users over the past Pellentesque rutrum ante in nulla suscipit, vel posuere leo tristique.
Subash Chandra
We’ve invested every aspect of how we serve our users over the past Pellentesque rutrum ante in nulla suscipit, vel posuere leo tristique.
Subash Chandra
We’ve invested every aspect of how we serve our users over the past Pellentesque rutrum ante in nulla suscipit, vel posuere leo tristique.
Subash Chandra
We’ve invested every aspect of how we serve our users over the past Pellentesque rutrum ante in nulla suscipit, vel posuere leo tristique.